গ্রাম-পশ্চিম আধার মানিক, ওয়ার্ড-০৩, ডাকঘর-রঘুনন্দন হাট-৪৩৪৬, উপজেলা-রাউজান, জেলা-চট্টগ্রাম।
কাপ্তাই সড়ক হইতে রাউজান নোয়াপাড়া সেকশন-২ সড়ক দিয়ে পুরাতন রঘুনন্দন চৌধুরী হাট হয়ে নিশ্চার ঘাট ব্রীজ সংলগ্ন মহাকবি নবীন সেন স্মৃতি কমপ্লেক্স।
রাঙ্গামাটি সড়ক হইতে রাউজান নোয়াপাড়া সেকশন-২ সড়ক দিয়ে পুরাতন রঘুনন্দন চৌধুরী হাট হয়ে নিশ্চার ঘাট সংলগ্ন মহাকবি নবীন সেন স্মৃতি কমপ্লেক্স।
0
১০ ফেব্রুয়ারি ছিল মহাকবি নবীন চন্দ্র সেনের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। রাউজানে জন্ম নেয়া এ কবি তার কাব্যের মাধ্যমে বাঙালির স্বদেশ চেতনার প্রকাশ ঘটান। কবি নবীন চন্দ্র সেন রচিত 'পলাশীর যুদ্ধ' কাব্যে কবি মীর মদন ও মোহন লালের মধ্য দিয়ে দেশাত্মবোধকে সমুন্নত করে তুলেছেন। 'অবকাশে' কবি ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, 'তেজহীন, বীর্যহীন,/আমাদের হায়; কোন পাপের এ ফল/করে ভিক্ষাপান কণ্ঠে দাসত্ব শৃঙ্খল।' ১৮ শতকের ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন থেকে শুরু করে ১৯ শতকে জন্ম নেয়া দেশের সংবিধান রচয়িতাদের একজন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মতো বহু গুণীর জন্ম এ রাউজানে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালনভূমি চট্টগ্রামের একটি উপজেলা রাউজান। বিগত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় এখানে জন্ম নিয়েছে উপমহাদেশের খ্যাতিমান অনেক গুণী। ক্ষণজন্মা এসব গুণীজনের মধ্যে একজন হলেন মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৪৭ সালে উপজেলার পশ্চিম গুজরা গ্রামে। মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন 'পলাশীর যুদ্ধ' নামে মহাকাব্যসহ অনেক কাব্য রচনা করে সে সময় উপমহাদেশজুড়ে আলোচিত হয়েছিলেন। তার রচিত কাব্যগুলো এখনো জ্ঞানীজনদের গবেষণার বিষয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, খ্যাতিমান জমিদার বংশীয় এ মহাকবির স্মৃতি রক্ষায় যুগে যুগে আমরা উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আসছি। তার শ্মশানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার। মহাকবির জন্মস্থানের মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কবি পরিবারের বিশাল সম্পত্তি যুগে যুগে গ্রাস করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে প্রশাসনযন্ত্র প্রভাবশালীদের হাতে কবি পরিবারের সম্পত্তি তুলে দিতে সহযোগিতা করেছে। পশ্চিম গুজরা এলাকায় মহাকবির বসতভিটা পরিদর্শনকালে কথা হয় নবীন চন্দ্র স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি পরিমল দের সঙ্গে। তিনি জানান, কবির সহায় সম্পত্তি বলতে এখন অবশিষ্ট কিছুই নেই। সব কিছু উজাড় হয়ে গেছে। নিশ্চারঘাট খাল পাড়ে কবির শ্মশানটিও এখন মহল বিশেষ গ্রাস করার তৎপরতায় রয়েছে। তার কথায়, বছরের পর বছর অযত্ন-অবহেলায় কবির শ্মাশানটি ঢাকা পড়েছিল ঝোপঝাড়ে। এটি সমপ্রতি পরিষ্কার করা হয়েছে।
নবীন চন্দ্র সেন ও তার কাব্য : মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন ১৮৬৩ সালে চট্টগ্রাম স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাস করেন। ১৮৬৫ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ এবং ১৮৬৮ সালে জেনারেল অ্যাসেমবিস্নজ ইনস্টিটিউশন থেকে বিএ পাস করেন। তারপর ১৮৬৮ সালে তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯০৪ সালে তিনি অবসরে যান। ছাত্র জীবন থেকেই নবীন চন্দ্র কবিতা লেখা শুরু করেন। প্যারীচরণ সরকার সম্পাদিত এডুকেশন গেজেটে তার কবিতা প্রকাশিত হতো। তার প্রথম কাব্য সংকলন 'অবকাশরঞ্জিনী' প্রকাশিত হয় ১৮৭১ সালে। ১৮৭৫ সালে তার 'পলাশীর যুদ্ধ' মহাকাব্য প্রকাশিত হলে তিনি ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েন। নবীন চন্দ্র সেনের বিখ্যাত ৩টি কাব্যগ্রন্থ হলো রৈবতক (১৮৮৭), কুরুক্ষেত্র (১৮৯৩) ও প্রভাস (১৮৯৬)। এ ত্রয়ী কাব্য নবীন চন্দ্রের কবি প্রতিভার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। এ ত্রয়ী কাব্যে নবীন চন্দ্র সেনের প্রচেষ্টা ছিল হিন্দু ধর্মীয় জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ ঘটানো। এ কাব্য ৩টির নায়ক কৃষ্ণ এবং এতে যথাক্রমে কৃষ্ণের আদি, মধ্য ও অন্তর্লীলা বর্ণিত হয়েছে। নবীন সেনের এ ৩টি কাব্য মহাকাব্যেরও লক্ষণাক্রান্ত। নবীন চন্দ্রের আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো আমার জীবন, খ্রিস্ট, ক্লিওপেট্রা, ভানুমতী, প্রবাসের পত্র ইত্যাদি। তিনি ভগবদ্গীতা ও চ-ীর কাব্যানুবাদ করেন। তার আত্মজীবনী 'আমার জীবন' গ্রন্থখানি উপন্যাসের মতোই সুখপাঠ্য এবং সমকালীন সমাজ, রাজনীতি ও প্রশাসন সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্য দলিল। মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনুসারী মহাকবি হিসেবে অধিক পরিচিত হলেও নবীন চন্দ্র সেন অনেক উল্লেখযোগ্য গীতি কবিতা ও আখ্যান কাব্যও রচনা করেছেন। স্বজাত্যবোধ ও স্বদেশানুরাগ তার কাব্যের মৌলিক আবেদন। ১৯০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
কবির জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানালো রাউজানবাসী : গত ১০ ফেব্রুয়ারি মহাকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকীতে আয়োজন করা হয় এক স্মরণ সভা। এ আয়োজনটি ছিল স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে। কয়েকটি স্থানীয় সংগঠনও স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ফুল দিয়ে। তাদের মধ্যে অন্যতম মহাকবি নবীন সেন স্মৃতি সংসদ, আবুরখীল ইনভেনটিভ কোচিং সেন্টার, রামমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকম-লী। স্মরণ সভায় পরিমল কান্তি দের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন এলাকার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এম আব্বাস উদ্দিন, সমাজসেবক আজম খান, যুবলীগ নেতা সাহাবুদ্দিন আরীফ, অংশুমান বড়ুয়া, রণজিৎ ভট্টাচার্য, ফজল হক মনি, আনোয়ার হোসেন, অভিজিৎ বিশ্বাস, সুবোধ রঞ্জন বড়ুয়া, অমল বড়ুয়া প্রমুখ। বক্তারা সরকারের কাছে এখানে কবির নামে স্থায়ী কমপ্লেক্স করার দাবি জানান।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস